ঢাকার ভিড়ভাট্টা, শহরের গতি, আর সারাদেশে দ্রুত বাড়তে থাকা অনলাইন কর্মসংস্থান—এসব মিলেই আজ ডিজিটাল দক্ষতা এক ধরনের নীরব শক্তিতে পরিণত হয়েছে। স্মার্টফোনের সাধারণ ব্যবহার থেকে শুরু করে কম্পিউটারের দক্ষতা—ডিজিটাল লিটারেসি এখন আর অতিরিক্ত সুবিধা নয়; এটি বর্তমান যুগে টিকে থাকার আবশ্যিক দক্ষতা। আর এই দক্ষতা অর্জন করলে খুলে যায় চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং ও উদ্যোক্তা হওয়ার অসংখ্য পথ।
কেন এখন ডিজিটাল লিটারেসি সবচেয়ে জরুরি
বিশ্বব্যাপী কর্মবাজার দ্রুত বদলাচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে—২০২৭ সালের মধ্যে বিশ্বের ৬০% কর্মীকে নতুনভাবে প্রশিক্ষণ নিতে হবে তাদের চাকরি ধরে রাখতে বা ভালো চাকরি পেতে। নিয়োগদাতারা এখন যে দক্ষতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন, তার মধ্যে রয়েছে—
- অ্যানালিটিক্যাল থিংকিং
- ডিজিটাল কমিউনিকেশন
- ডেটা ও AI–সম্পৃক্ত দক্ষতা
- অনলাইন সহযোগিতা
বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও চিত্র একই। দেশীয় গবেষণাগুলো দেখায় যে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং—এসব দক্ষতার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে বাংলাদেশের সাফল্য মূলত ডিজিটাল দক্ষতার ওপরই দাঁড়িয়ে আছে।
কিন্তু এখানেই বড় ঘাটতি—অনেক তরুণ-তরুণীর ডিজিটাল সক্ষমতা সীমিত, আত্মবিশ্বাস কম, এবং প্রযুক্তি ব্যবহারে অনুশীলনের অভাব আছে।
তাই ডিজিটাল লিটারেসি সরাসরি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, আয় বৃদ্ধি এবং ক্যারিয়ার স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত।
ডিজিটাল লিটারেসি বলতে কী বোঝায়
ডিজিটাল লিটারেসি শুধু মোবাইল চালানো জানাকে বোঝায় না। এটি চারটি স্তরের একটি পথ—
১) ভিত্তি দক্ষতা
- ইন্টারনেট নিরাপত্তা
- ইমেইল ব্যবহার
- টাইপিং ও ফাইল ম্যানেজমেন্ট
- Word, Excel, PowerPoint
- Google Workspace
২) প্রয়োগযোগ্য দক্ষতা
- কার্যকর সার্চিং
- ডিজিটাল কমিউনিকেশন (ইমেইল টোন, পেশাদার বার্তা)
- অনলাইন সহযোগিতা
- শিট ও ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট
৩) পেশাদার দক্ষতা
- WordPress/Website তৈরি
- মৌলিক SEO
- ডিজিটাল মার্কেটিং ও সোশ্যাল মিডিয়া
- Canva ও গ্রাফিক ডিজাইন
- ডেটা অ্যানালাইসিস (শিট, চার্ট)
৪) উন্নত দক্ষতা
- প্রোগ্রামিং
- মেশিন লার্নিং–এর শুরু
- ক্লাউড টুলস
- UI/UX
এই বিভিন্ন স্তরের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে কর্মজীবনে পৌঁছানোর বাস্তব দক্ষতা।
কোন দক্ষতা কোন চাকরির দরজা খুলে দেয়
- ভিত্তি + প্রয়োগযোগ্য দক্ষতা
→ অফিস সহায়ক, ই-কমার্স সাপোর্ট, কাস্টমার সার্ভিস, শেখার সহকারী/টিউটর - পেশাদার দক্ষতা
→ ফ্রিল্যান্সিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, কন্টেন্ট ডিজাইনার - উন্নত দক্ষতা
→ ওয়েব ডেভেলপার, জুনিয়র ডেটা অ্যানালিস্ট, টেকনোলজি–ভিত্তিক রিমোট চাকরি
বিশ্বব্যাপী শিক্ষা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (যেমন UNESCO, World Bank) মতে—ধাপে ধাপে দক্ষতা বাড়ানোই টেকসই কর্মসংস্থানের চাবিকাঠি।
আপনার জন্য একটি ব্যবহারিক ৮ ধাপের পথনির্দেশ
১. ভিত্তি কোর্স দিয়ে শুরু করুন (২০–৪০ ঘণ্টা)।
Word, Excel, ইমেইল, নিরাপত্তা—এগুলো বেশিরভাগ চাকরির বেসিক চাহিদা।
২. দ্রুত একটি ছোট পোর্টফোলিও তৈরি করুন।
একটি ওয়েবপেজ, কয়েকটি ডিজাইন, একটি Excel শিট—যত ছোটই হোক, কাজে লাগে।
৩. একটি আয়–উৎপাদক দক্ষতা বেছে নিন।
WordPress, Canva, ডিজিটাল মার্কেটিং বা ডেটা—একটি দক্ষতায় গভীর হন।
৪. ছোট প্রকল্পে অনুশীলন করুন।
পাশের দোকানের ফেসবুক পেজ বানানো বা পোস্টার তৈরি—এসবই আপনার অভিজ্ঞতা।
৫. ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের নিয়ম-কৌশল শিখুন।
কীভাবে বিড দিতে হয়, কীভাবে ক্লায়েন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়—এসব শেখা জরুরি।
৬. একটি “চিরকারি” দক্ষতা আপডেট রাখুন।
Excel, SEO বা Presentation—যে দক্ষতা সব কাজেই লাগে।
৭. সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুন।
কোর্স ব্যাজ, LinkedIn স্কিল টেস্ট—এগুলো আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়।
৮. নেটওয়ার্ক তৈরি করুন।
অনলাইন কমিউনিটি, Facebook গ্রুপ, অফলাইন ইভেন্ট—চাকরির সুযোগ এখানেই তৈরি হয়।
নিয়োগদাতারা কী খুঁজছেন
বাংলাদেশে অনেক নিয়োগকারী বারবার একটি বিষয় বলেন—প্রার্থীদের প্রায়ই সফট স্কিলসহ বাস্তব ডিজিটাল দক্ষতার অভাব থাকে।
যেমন—
- গুগল ড্রাইভে ফাইল সংগঠিত করা
- ইমেইলে পেশাদারভাবে উত্তর লেখা
- বেসিক Excel ফাংশন
- সমস্যা সমাধান ও ট্রাবলশুটিং
একটি ভালো ডিজিটাল লিটারেসি ট্রেনিং এসব ঘাটতি দূর করে এবং কর্মজীবনের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।
স্বয়ংক্রিয়তা ও AI–এর যুগে টিকে থাকার উপায়
অনেকে ভাবছেন AI হয়তো কাজ কেড়ে নেবে।
আসলে, গবেষণা বলছে—AI কাজ কমাবে না, বরং কাজের ধরন বদলে দেবে।
যে কর্মীরা—
- ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করতে পারে
- বিশ্লেষণ করতে পারে
- ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারে
তারা আরও মূল্যবান হয়ে উঠছে। এই তিন দক্ষতার ভিত্তি হলো ডিজিটাল লিটারেসি।
ছোট বিনিয়োগ, বড় ফলাফল
আজকের বাংলাদেশে ডিজিটাল লিটারেসি শেখা সবচেয়ে লাভজনক সিদ্ধান্তগুলোর একটি।
আপনি ছাত্র, চাকরিপ্রত্যাশী, কিংবা ঘরে বসে কাজ করতে চান—মাত্র কয়েকটি প্রশিক্ষণ, কিছু অনুশীলন, এবং একটি পোর্টফোলিও আপনার সামনে খুলে দিতে পারে—
- স্থিতিশীল চাকরি
- ফ্রিল্যান্সিং আয়
- আন্তর্জাতিক রিমোট সুযোগ
- আত্মবিশ্বাস ও পেশাদারিত্ব
IXcel Skills-এর মতো প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই যাত্রাকে বাস্তবসম্মত, সহজ ও ক্যারিয়ারমুখী করতে কাজ করছে—শেখা থেকে আয় পর্যন্ত একটানা পথ তৈরি করে।
